ফ্লোরেন্স নাইটিংঙ্গেল এর জীবনী জেনে নিন
বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮
Add Comment
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জীবন কাহিনি জেনে নিই।
ফ্লোরেন্স নাইটিংঙ্গেল এর জীবনী জেনে নিন - ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, লেখক এবং একজন পরিসংখ্যানবিদ। তাকে আধুনিক নার্সিং-এর জননী বলা হয়। ১৮২০ খ্রি. ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে এক অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার ছোটবেলা কেটেছে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ার অঞ্চলে তাদের পুরনো বাড়িতে। নার্সিংয়ে অগ্রণী ভূমিকার জন্য ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় তার নামটি সামনে চলে আসে। এ সময় রাতের আঁধারে আহত সৈন্যদের সেবা করার জন্য তিনি ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে অভিহিত হন।
- খুব কম সংখ্যক লোকই গণিতে তার অবদান সম্পর্কে জানেন। তিনিই প্রথম পরিসংখ্যানগত তথ্য উপস্থাপনের জন্য ডায়াগ্রাম ব্যবহার করেন । তিনিই প্রথম মহিলা যিনি রয়্যাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল সোসাইটির ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ এর পাশাপাশি একজন যোগ্যতা সম্পন্য গণিতবিদ যিনি তার নিজ উপায়ে statistical diagram তৈরি করেছিলেন এবং হাজার হাজার সৈন্যকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার জন্য এটি ব্যবহার করেন।
- ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল তাঁর পিতা মাতার ২য় কন্যা। ফ্লোরেন্সের চাচি তার ভাইঝির গণিত পাঠের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার মা এতে বাধা দেন কারন তিনি মনে করতেন মেয়েদের গণিত শেখার কোনো দরকার নেই। নাইটিংগেল রীতিসিদ্ধ গণিত অধ্যয়নের অনুমতির জন্য অনুনয় করলেন। তাঁর পিতা তাঁর কন্যাকে ইতিহাস, ভাষা, দর্শন এবং শাস্ত্রীয় সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। নাইটিংগেলের বাবা উইলিয়াম এডওয়ার্ডের গণিতের প্রতি চরম আগ্রহ থাকা সত্তেও তিনি তাঁর স্ত্রীর পক্ষ নেন কেননা তিনিও মনে করতেন মেয়েদের গণিত শেখার কোনো দরকার নেই। তার বাবা মায়ের সঙ্গে অনেক মানসিক যুদ্ধের পর নাইটিংগেল গাণিতিক গৃহশিক্ষক রাখার অনুমতি পান, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন জেমস জোসেফ সিলভেস্টার।
You May Like
- জেনে নিন কোন নবী কত দিন বেঁচে ছিলেন [Know how long a prophet lived]
- সত্যজিৎ রায়ের জীবন কাহিনী[Life Story Of Sattazid Ray]
- The biography of Umar (ra) of the second caliph of Islam [ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর জীবনী।]
- Biography of Hazrat Abu Bakar Siddiq (R) [হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর জীবনী]
- ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার পড়াশোনা শেষ করেছিলেন এবং তখন থেকে তিনি পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার পথ পরিবর্তন করবেন বলে চিন্তা করেন। তার চিন্তা ছিল ভবিষ্যতে তিনি একজন সেবিকা হবেন এবং সেবা কাজের জন্য আত্মনিয়োগ করবেন। কিন্তু তার এ সিদ্ধান্তের কথা শুনে পিতা খুবই দুঃখিত এবং মা ও বড় বোন রাগান্বিত হলেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল নীরবে সব সহ্য করলেন কিন্তু তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল-এর পিতা-মাতা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব জানালেন। নাইটিংগেল তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন। নাইটিংগেল তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। অবশেষে তার পিতা-মাতা বাধ্য হয়ে তাকে একটি হাসপাতালে কাজ করার অনুমতি দিলেন।
- ১৮৫৪ সালের মার্চে রাশিয়া, ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। ৩৮ জন সেবিকার সাথে তিনিও যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করেন। তিনি সেবিকাদের নিয়ে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলেন। সে যুগে মহিলা সেবিকারা কোনো সামরিক হাসপাতালে কাজ করতেন না। সামরিক হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা তার সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে লাগল। তিনি সব বাধা অতিক্রম করে তার কোমল হাতের স্পর্শে সবাইকে সুস্থ করতে লাগলেন। তার কঠোর পরিশ্রম ও অমায়িক ব্যবহারে হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সবাই ফ্লোরেন্সের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি দিনে কাজ করে রাতে মোমবাতি হাতে আহতদের খবর নিতেন। তাই সবাই তার নাম দিলেন 'লেডি উইথ দ্যা লাম্প'।
- ইংল্যান্ড এ ফিরে আসার পর নাইটিংগেল কে জাতীয় নায়িকা হিসেবে স্বাগত জানানো হয়। এই যুদ্ধ তাকে প্রমাণ করার সুযোগ করে দেয়েছিল যে, কিভাবে প্রশিক্ষিত নার্স, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি এবং সুব্যবস্থা জীবন বাঁচাতে পারে। Scutari তে অবস্থানকালে তিনি অনেক তথ্য সংগ্রহ করেন। ব্রিটিশ সরকার তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রাণনাশক পরিসংখ্যান’টি প্রকাশ করার অনুমতি দেয় নি যাতে তিনি দেখিয়েছিলেন যুদ্ধে সৈন্যদের মৃত্যুর মূল কারণ ছিল হাসপাতালের দুর্ব্যবস্থা। তিনি “polar-area diagrams” এর সাহায্যে হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর অবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন কারনে ব্রিটিশ সৈন্যদের মৃত্যুহার তুলে ধরেন। তিনি উপস্থাপন করেন যে অধিকাংশ ব্রিটিশ সৈন্য ক্ষত বা অন্যান্য কারণের চেয়ে অসুস্থতায় মারা যান।।
- ১৮৫৬ সালের সেপ্টেম্বের রানী ভিক্টোরিয়া তাকে স্কটল্যান্ডে তার প্রাসাদে ডেকে পাঠান এবং তারই পরামর্শ অনুসারে রয়েল কমিশনাল হাসপাতাল তৈরি করেন এবং নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন, যার নাম 'কিংস কলেজ ট্রেনিং স্কুল ফর মিড-ওয়াইফ'। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে ৪৫ হাজার পাউন্ড পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। কিন্তু পারিশ্রমিকের টাকা নিজের জন্য ব্যয় না করে তিনি 'নাইটিংগেল' নামক ফান্ডে সব জমা রাখেন এবং সর্বপ্রথম লন্ডনে সেন্ট টমাস হাসপাতালে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলকে নার্সিং-এর জননী বলা হয়। তার আত্মত্যাগ ও চিন্তা-চেতনার জন্য বিশ্বের অন্য পেশা থেকে এ পেশা ব্যতিক্রমধর্মী সেবামূলক পেশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
- পরবর্তীতে জীবনে , ফ্লোরেন্স তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি বহু দেশ থেকে সন্মান অর্জন করেছেন, এবং ১৯০৭ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে Order of Merit প্রদান করে। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট তিনি লন্ডনের পার্ক লেনের সাউথ স্ট্রিটে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে সেন্ট মার্গারেট চার্চে সমাহিত করা হয়।
Related Posts
- The biography of Umar (ra) of the second caliph of Islam [ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর জীবনী।]
- জেনে নিন কোন নবী কত দিন বেঁচে ছিলেন [Know how long a prophet lived]
- বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী জেনে নিন।
- সত্যজিৎ রায়ের জীবন কাহিনী[Life Story Of Sattazid Ray]
- হযরত ঈসা (আঃ) এর জীবনী
- Biography of Hazrat Abu Bakar Siddiq (R) [হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর জীবনী]
Subscribe Our Newsletter
0 Comments to "ফ্লোরেন্স নাইটিংঙ্গেল এর জীবনী জেনে নিন"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন