কিয়ামতের বড় আলামতসমূহ জেনে নিন।
মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
Add Comment
কিয়ামতের বড় আলামতসমূহ জেনে নিন।
কিয়ামতের বড় আলামতসমূহ জেনে নিন।Add caption |
১. ইমাম মাহদীর আগমণঃ
সহীহ হাদীছের বিবরণ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। উম্মাতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে বিরাট কল্যাণের ভিতর থাকবে। ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল-ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শত্রুরা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যাণ বিরাজ করবে। النهاية/ الفتن و الملاحم ( 1/ 31))|
সহীহ হাদীছের বিবরণ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। উম্মাতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে বিরাট কল্যাণের ভিতর থাকবে। ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল-ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শত্রুরা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যাণ বিরাজ করবে। النهاية/ الفتن و الملاحم ( 1/ 31))|
ইমাম মাহদীর পরিচয়ঃ
তাঁর নাম হবে আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামের মতই এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পিতার নামের মতই। তিনি হবেন হাসান বিন আলী (রাঃ)এর বংশ থেকে। ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী।(নিহায়া, অধ্যায়: আল-ফিতান ওয়াল মালাহিম)।
তাঁর আগমণের স্থানঃ
তিনি পূর্বের কোন একটি অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। তবে পূর্ব দিক বলতে মদীনা মুনাওয়ারা হতে পূর্বের দিক বুঝানো হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কিছু বিষয়ের কথা বর্ণনা করলেন যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী।(ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী বলেন ‘আল্লাহ খলীফা কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ)।
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ উল্লেখিত হাদীছে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কাবা ঘরের ধন-ভান্ডার। তিনজন খলীফার পুত্র তা দখল করার জন্য ঝগড়া করবে। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। সর্বশেষে আখেরী যামানায় পূর্বের কোন একটি দেশ হতে মাহদী আগমণ করবেন। মূর্খ শিয়ারা সামেরার গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে তিনি গর্তের মাঝে লুকায়িত আছেন। শিয়াদের একটি দল প্রতিদিন সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে আপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্ণিত আছে। এসমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং কুরআন, হাদীছ এবং বিবেক বহির্ভূত কথা। তিনি আরো বলেনঃ পূর্বাঞ্চলের লোকেরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর শাসনকে সমর্থন করবে। তাঁরা কালো পতাকাধারী হবেন। মোটকথা আখেরী যামানায় পূর্বদেশ হতে তাঁর বের হওয়া সত্য। কাবা ঘরের পাশে তাঁর জন্যে বায়আত করা হবে।(النهاية/ الفتن و الملاحم ( 1/29-30)|
মাহদী আগমণের দলীলসমূহঃ
ইমাম মাহদীর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে। কোন কোন হাদীছে প্রকাশ্যভাবে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন হাদীছে তাঁর গুণাগুণ উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর আগমণ সত্য হওয়ার জন্য এ সমস্ত হাদীছই যথেষ্ট।
১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন।(মুস্তাতাদরাকুল হাকিম। ইমাম আলবানী র: হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং-৭১১)।
২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ æআমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আকাশ-যমিনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন। (মুসনাদে আহমাদ। ইমাম হায়ছায়ী বলেন: হাদীছের বণনাকারীগন নির্ভরযোগ্য মাজমাউয যাওয়ায়েদ-৭/৩১৩-৩১৪)।
৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ
æমাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তাঁর কপাল হবে উজ্জল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন।(আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুল মাহদী, সহীহুল জামে আস-সাগীর, হাদীছ নং-৬৬১২)।
৪) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ æআমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ মাহদীর আগমণ হবে আমার পরিবারের ফাতেমার বংশধর হতে।(আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ। ইমাম আলবানী র: সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামেউ, হাদীছ নং-৬৬১২)।
৫) জাবের (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈসা (আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন।(আল-মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা নং ১৪৭-৪৮, ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেন: হাদীছের সনদ ভাল)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম আল-মানারুল মুনীফ গ্রন্থে উক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। যেই আমীরের ইমামতিতে মুসলমানগণ নামায পড়বেন, তিন তাঁর নামও উল্লেখ করেছেন। আর তিনি হলেন মাহদী। এই হাদীছ সম্পর্কে ইবনুল কায়্যেম বলেনঃ হাদীছের সনদ খুব ভাল। (আল মানারুলমুনীফ পৃষ্ঠা নং ১৪৮)।
৬) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেনঃ ঈসা ইবনে মারইয়াম যেই ইমামের পিছনে নামায পড়বেন তিনি হবেন আমাদের মধ্যে হতে। (আবুর নুয়াইম আখবারুল মাহদী নামক গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। সহীহুল জামে আস-সাগীর, হাদীছ নং-৫৭৯৬)।
৭) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ æততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরূপ। (মুসনাদে আহমাদ, সহীহুল জামেউস সাগীর, হাদীছ নং-৫১৮০)। তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ।
৮) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাবা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। উম্মে সালামা বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করলাম অপছন্দ সত্ত্বেও যারা তাদের সাথে যাবে তাদের অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে। (মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)
৯) হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কাবা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে। শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্তুতি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)
১০) আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ æএকদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমের ঘোরে এলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কাবার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ তাআলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান) তাদেরকে নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করার অর্থ তাদের কেউ জান্নাতে যাবে আবার কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা নিজেদের ভ্রান্ত জেনেও উক্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হবে তারা জাহান্নামী হবে। আর যাদেরকে বাধ্য করে আনা হবে তাদের কোন অপরাধ হবেনা। এমনিভাবে পথিক ও পার্শ্ববর্তী স্থানের লোকেরাও উক্ত ভূমিধস থেকে রেহাই পাবেনা। কিন্তু সকল শ্রেণীর লোক নিজ নিজ আমল নিয়ে পুনরুত্থিত হবে।
উপরের তিনটি হাদীছ থেকে জানা গেল যেই লোকটি কাবার প্রান্তে আশ্রয় গ্রহণ করবেন তিনি হবেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভূক্ত। তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হবেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ভূমিধসের মাধ্যমে ধ্বংস করবেন।
Related Posts
Subscribe Our Newsletter
0 Comments to "কিয়ামতের বড় আলামতসমূহ জেনে নিন।"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন