ইসলাম কি বলে তাবিজ, কবচ, ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ কি জায়েজ।

তাবিজ, কবচ, ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ

ইসলাম কি বলে তাবিজ, কবচ, ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ কি জায়েজ।
ইসলাম কি বলে তাবিজ, কবচ, ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ কি জায়েজ।

সৌভাগ্য লাভের আশায় এবং মন্দভাগ্য দূর করার জন্য প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বহু মানুষ তাবিজ, লোহা-পিতল-তামার চুড়ি, মালা, ঝিনুক পরে, গাড়ীতে বা বাড়ীর দরজায় বা চাবির রিঙে বিভিন্ন আয়াত লেখা ফলক ঝুলায়, বা কুনজর থেকে বাঁচার জন্য ছেলেমেয়ের গায়ে মুক্তা বা হাড়ের তৈরী মালা, বা কালো সূতা বাঁধে। এ সম্পর্কে মুসলিম উলেমার মতামত দুভাগে বিভক্ত।

১) কুরআনের আয়াত লিখিত তাবিজ ছাড়া আর সব ধরনের তাবিজ জাতীয় জিনিস হারাম – এ ব্যাপারে সকলেই একমত।

২) কুরআনের আয়াত লিখিত তাবিজ কারো কারো মতে জায়েজ, কারো কারো মতে না-জায়েজ। এইসব জিনিসকে (তাবিজ জাতীয়) আরবীতে তামা’ইম (একবচনে তামীমা) বলা হয়। এসম্পর্কে যে সব হাদীস পাওয়া যায় সেগুলি হচ্ছে:

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের (রাঃ) স্ত্রী যায়নাব আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের (রাঃ) কাছ থেকে বর্ণনা করেন: “আমি রাসূল (স) কে বলতে শুনেছি যে ঝাড়ফুঁক তাবিজ ও কবচ হচ্ছে শিরক।” আমি বললাম, ‘আপনি কেন একথা বললেন? আল্লাহর কসম, আমার চোখ দিয়ে অসুখের কারণে পানি ঝরছিল এবং আমি অমুক ইহুদীর কাছে গিয়েছিলাম, সে ঝাড়ফুঁক করতেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেল।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘এটা শয়তানের কারসাজি ছিল, সে তার হাত দিয়ে তোমার চোখে খোঁচা দিচ্ছিল, ইহুদীটি মন্ত্র উচ্চারণ করতেই সে থেমে গেল। কারণ যখন তুমি তাকে মেনে নিচ্ছিলে সে থেমে যাচ্ছিল আর যখন তুমি তার অনুগত হচ্ছিলে না তখন সে খোঁচা দিচ্ছিল। তোমার যা বলা উটিত ছিল তা হচ্ছে এই দু’আ: ইযহাবিল বা’স রাব্বান নাস ওয়া আশফি আনতা আশ শাফি’ লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফা’ আল লা ইউঘাদিরু সাকামান।’ (অর্থ: মন্দ দূর কর, হে মানবজাতির রব, এবং সুস্থতা দাও, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া কোন আরোগ্য নেই, এমন আরোগ্য যা রোগের কোন চিহ্ন রাখে না।) (আবু দাউদ ৩৮৮৩; ইবন মাজাহ ৩৫৩০, মুহাদ্দিস শাইখ নাসরুদ্দিন আলবানী এই হাদীসকে সহীহ্‌ বলেছেন) উকবা ইবন আমির (রাঃ) বলেছেন: আমি আল্লাহর রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি: “যে তাবিজ পরবে, আল্লাহ যেন তার কোন অভাব পূরণ না করেন, এবং যে ঝিনুক পরবে, আল্লাহ যেন তাকে শান্তি না দেন।” (আহমাদ ১৬৯৫১, মুহাদ্দিস শাইখ নাসরুদ্দিন আলবানী এই হাদীসকে যয়ীফ বলেছেন)

উকবা ইবন আমির আল জুহানী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসূল (সা) এর কাছে দশজনের একটি দল বাইয়াত হতে এসেছিল। রাসূল (সা) তাদের মধ্যে নয়জনের বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করলেন, একজন বাদে। তারা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি একজন বাদে আর নয়জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘সে তাবিজ পরে আছে।’ লোকটি তখন তার শার্টের ভিতর হাত ঢুকিয়ে তাবিজ বের করে ভেঙ্গে ফেলল, তখন রাসূল (সা) তার বাইয়াত নিলেন। তিনি বললেন, ‘যে তাবিজ পরে, সে শিরক করেছে।’” (আহমাদ; তিরমিযী, মুহাদ্দিস শাইখ নাসরুদ্দিন আলবানী এই হাদীসকে সহীহ্‌ বলেছেন) ইমরান ইবন হুসাইন (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যখন রাসূল (সা) এক ব্যক্তির বাহুতে পিতলের বালা দেখতে পেলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ধ্বংস হোক! এটা কি?” সে বলল, “এটা তাকে একটা রোগ যার নাম আল-ওয়াহিনা (দুর্বলতা, সম্ভবত: বাত), তা থেকে রক্ষা করবে।” রাসূল (সা) তখন বললেন “ওটা ছুঁড়ে ফেলে দাও, কারণ এটা তোমার দুর্বলতাই বৃদ্ধি করবে এবং যদি তুমি এটা পরা অবস্থায় মারা যাও, তুমি কখনও সফল হবে না।” (আহমাদ; ইবন মাজাহ; ইবন হিব্বান)

সুস্থ বা অসুস্থ লোকেরা তামা, পিতল বা লোহার চুড়ি, বালা বা আংটি পরবে এই বিশ্বাসে যে সেগুলি রোগ সারাতে পারে – এটা নিষিদ্ধ। রাসূল (সা) বলেন “তোমরা অসুস্থতার চিকিৎসা কর, কিন্তু হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করো না।” (আবু দাউদ, বায়হাকী)

ঈসা ইবন হামযা (রাঃ) বলেন: “আমি আব্দুল্লাহ ইবন আকিমকে (রাঃ) দেখতে গিয়েছিলাম, তাঁর মুখ জ্বরে লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, ‘আপনি কেন তাবিজ ব্যবহার করছেন না?’ তিনি বললেন, ‘আমরা এ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। রাসূল (সা) বলেছেন: যে কোন ধরনের তাবিজ পরবে সে সেটার অধীনে আছে বলে বিবেচিত হবে… ’ ”(অর্থাৎ সে তারই উপর নির্ভরশীল) (আবু দাউদ)

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) একদিন তাঁর স্ত্রীকে দেখলেন একটি গিঁট দেয়া সূতা গলায় পরতে। তিনি সেটা টেনে ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “আব্দুল্লাহর পরিবার আল্লাহর সাথে অন্য কোন কিছুকে শরীক করা থেকে মুক্ত।” তারপর তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি: ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও বশীকরণ এগুলি হচ্ছে শিরক।”

Related Posts

Subscribe Our Newsletter

0 Comments to "ইসলাম কি বলে তাবিজ, কবচ, ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ কি জায়েজ।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel